সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলার পর একধরণের স্বস্তি পাচ্ছি। এখন ভাবতে হবে মৃত্যুটা কিভাবে কার্যকর করবো, সবচেয়ে সহজ উপায়টা হচ্ছে সাতাশ তলার বারান্দা থেকে নিজেকে ছুঁড়ে ফ্যালা। কয়েকটা সেকেন্ড ওজনহীনতার স্বাদও পাওয়া যাবে বিনামূল্যে। নাহ, সাবধানতার লাইসেন্স নাই। কোন ভাবে যদি বেঁচে যাই বাকি জীবন ভাঙা হাত-পা নিয়ে ধুঁকতে হবে। তার থেকে সায়ানাইড ভালো; নিশ্চিত মৃত্যু।
দু’ঘণ্টার মাঝেই পাঁচ মাত্রার সায়ানাইড পাওয়া গেলো, সিরিঞ্জ প্রস্তুত। আধ ঘন্টা ধরে আস্তে আস্তে মৃত্যু হবে। শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে যাবে। সবশেষে আক্রমণ হবে মাথায়। মৃত্যুটা উপভোগ করতে চাই, সেজন্য খানিকটা উত্তেজক পানীয় প্রস্তুত রেখেছি। আলোটা বাড়িয়ে দিলাম, অন্ধকার ভালো লাগে না। ঘরটাও গোছাতে হবে, নীল শার্টটা খুজে বের করতে হবে... আগে শাওয়ার নিয়ে নেই, আফটারশেভটা শেষ মনে হচ্ছে...
আস্তে আস্তে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। হাতে সায়ানাইড ভরা সিরিঞ্জ, ধমনী প্রস্তুত। ধীরে ধীরে ধমনীতে সূচ ঢুকে গেলো... পাঁচ গ্রাম নিমিষেই...
"আমি মারা যাচ্ছি"
স্ট্যাটাস ফেসবুকে দিলে দুই-তিনটা লাইকও পেতাম হয়ত। আচ্ছা মৃত্যু ছাড়া কি আর কোন উপায় ছিলো না ? অবশ্যই ছিলো।
কিন্তু এভাবে বেঁচে থেকেই বা কি এমন করতাম...
ফিলসফির সময় এটা না। দীর্ঘ জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তগুলোর কথা ভাববো। ভাবতে ভাবতে মরে যাবো। সার্থক জীবন। নিঃশ্বাস নিতে কি যে শান্তি লাগছে, অথচ একটু বাদে এই চিরচেনা হৃদপিণ্ডটা আর অক্সিজেন সমৃদ্ধ বাতাস পাম্প করবে না। হাত থেকে হয়ত ডাইরিটাও পড়ে যাবে। কি আশ্চর্য! আমি থাকবো না, কিন্তু ডাইরিটা থেকে যাবে...
আমি মরে গেলে কি মানুষ বলবে “আহারে কি ভালো মানুষ ছিলো...” সম্ভবত বলবে না। এখনও পৃথিবীতে আত্মহত্যা আর বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক স্বীকৃত না। যত ভালোই হোক আত্মহত্যা করলে মানুষ দুঃখ করে না। উহ-আহ করে না। লাশ নিয়ে ভালো ঝামেলা হতে পারে... ধ্যাত এইসব চিন্তা আমার না...
কেমন যেন খারাপ লাগছে, কিছুই করতে পারলাম না। ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পেলাম না, যারা ভালোবাসলো তাদের কাছে টানলাম না। একটা বাড়ি হল না। কার লোনটা শোধ করতে পারলাম না। ওয়াশিং মেশিনটা ঠিক করালাম না। লন্ড্রি...
ধুর এসব চিন্তা বাদ। আচ্ছা আমি কি কখনো প্রথম হয়েছি জীবনে...? স্কুলে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় দু’বার পুরস্কার পেয়েছিলাম... আবৃত্তিতে একবার। নাহ প্রথম হই নাই কখনো... না...না...না... বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া প্রতিযোগিতায় একবার মনে হয় প্রথম হয়েছিলাম। তবে সেবার চিটিংও করেছিলাম, সবাই সাপ্তাহে একটা বই পেতো আমি নিতাম তিনটা...
আর কি করেছি...
...নীলক্ষেত থেকে টিএসসি পর্যন্ত হেঁটেছি ভালোবাসার মানুষটার সাথে। সেদিন আমি ছিলাম যুদ্ধোত্তর পৃথিবীর জয়ী সেনাপতি, সেদিনের সবকিছু ক্যামন যেন স্লো মোশনে চলছিলো। এত ভালো লাগছিলো যে প্রচণ্ড রোদ্দুরে পাশের মানুষটার ঘর্মাক্ত মুখটা খেয়ালই করিনি অনেকক্ষণ। সেই রোদ্দুরেই খোলা মাঠের মাঝখানে দু’জনে বসে ছিলাম অনেকটা সময়। সেদিনের পর আমি আর বেঁচে থাকতে চাইনি। সেদিনের পর সত্যি আমি বেঁচে থাকিনি। আমার ঈশ্বর জানেন বিশ্বব্রহ্মান্ডের একমাত্র নিস্কলঙ্কতা, অজর অমর পবিত্রতার একমাত্র রূপ, আমার দেবী... আমার পাশে হেঁটেছিলো... সেদিনের পর আমি বেঁচে থাকতে চাইনি... সেদিনের পর আমি বেঁচে থাকিনি...
সময় শেষের দিকে। এসব চিন্তা মন আরও খারাপ করে দিচ্ছে। স্বাদ-গন্ধ লোপ পাচ্ছে খুব ধীরে ধীরে। মৃত্যুতে এত শান্তি! বেঁচে থাকলে সব ক্যান্সার আর এইডস রোগীদের দুই বেলা করে সায়ানাইড নিতে বলতাম। আচ্ছা; আমি তো এখনও মারা যাইনি। এখনই ‘ছিলাম’ উপসর্গ ব্যাবহার করা শুরু করে দিয়েছি। বেশ ভালো।
সব কিছু ঘোলা ঘোলা লাগছে... মাথাটা ঘুরছে... বহু কষ্টে ফোনটা নিয়ে ডায়াল লিস্ট খুঁজে বের করলাম। রিং হচ্ছে...
খট করে শব্দ হলো। বহু বছর পর খুব পরিচিত একটা কণ্ঠ শুনতে পেলাম...
আমি গাইলাম; “অমরত্বের প্রত্যাশা নেই, নেই কোন দাবী-দাওয়া এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকেই চাওয়া”
রাত শেষ হয়ে আসছে। আমি জানি যে কোন মুহূর্তে হাত থেকে ফোনটা পড়ে যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে... ঠিক এই মুহূর্তে... আমি বিশ্বব্রহ্মান্ডের সবচেয়ে সুখী মানুষ...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আখতারুজ্জামান সোহাগ
মন খারাপ হয়ে গেল গল্পটা পড়ে। দারুণ লেখনী। কিন্তু বলছি, এ রকম ভাগ্য না হোক কারো। শুভকামনা রইল লেখকের জন্য।
আপেল মাহমুদ
একটি মিথ্যে সুখী মানুষের গল্প। উপস্থাপনাটা দারুন। মনে হচ্ছিলো গল্পের সাথে মিশে গেছি। সাদিয়া আপুর ভাষায়- "শুভবোধ মৃত্যুর আনুষ্ঠানিকতাকে ভন্ডুল করে দিক।"
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।